বিনা হিসাবে জান্নাতে যেতে পারবেন তাদের মধ্যে একশ্রেণীর মানুষ হলেন তারা, যারা যত্ন ও মনোযোগ সহকারে আর খুসু খুযুর সাথে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করেন।
কুরআনে বিভিন্ন সূরায় তাহাজ্জুদ নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। তাহাজ্জুদ নামাজ নফল ইবাদত গুলোর মধ্যে শ্রেষ্ঠতম।
তাহাজ্জুদ নামাজ ঘুম ত্যাগ করে গভীর রাতে পড়তে হয় তাই আল্লাহ এর প্রতিদানও বেশি দিয়ে থাকেন। আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে এই নামাজ পড়তে বিশেষভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
নবীজীকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা'আলা বলেন 'রাত্রির কিছু অংশ কোরআন পাঠ সহ জাগ্রত থাকুন। এটা আপনার জন্য অতিরিক্ত।
আপনার পালনকর্তা আপনাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করবেন মাকামে মাহমুদে পৌঁছাবেন। [সূরা-১৭ বনি ইসরাইল,আয়াত:৭৯] এই নামাজকে সালাতুল লাইল বা কিয়ামুল লাইল নামাজ বলা হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে
১. তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন?
২. তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
৩. তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি, বাংলায় পড়তে হবে নাকি আরবিতে পড়তে হবে?
৪. তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হবে?
৫. তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম কি?
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর নিয়ে এই ব্লক পোস্টটিতে আলোচনা করা হবে।
১.তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক সময় কখন ?
এশার সালাতের পরে বা দুই তৃতীয়াংশ রাত অতিবাহিত হলে তাহাজ্জুদ নামাজের সময় শুরু হয়। তবে অর্থ রাতের পর থেকে তাহাজ্জুদ নামাজ পড়া ভালো। শেষ রাতে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা সর্বোত্তম রাত ৩- ৪টার আগ পর্যন্ত তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করার সবচেয়ে সঠিক সময়। তাহাজ্জুদ নামাজ একা পড়াই উত্তম।
হযরত আবু হুরায়রা রাঃ বলেন রাসূল সাঃ বলেছেন সব নফল নামাজের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল তাহাজ্জুতের নামাজ তথা রাতের নামাজ। (মুসলিম, তিরমিজি, নাসাঈ) তবে ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে তাহাজ্জুদের সময় শেষ হয়ে যায়। ওই সময় তাহাজ্জুদের সালাত আদায় করলে তা তাহাজ্জুদের সালাত বলে গণ্য হবে না। তা শুধুমাত্র নফল নামাজ হিসেবে ধরা হবে।
২. তাহাজ্জুদ নামাজ কত রাকাত?
তাহাজ্জুতের নামাজ ২ থেকে ১২ রাকাত পর্যন্ত পড়ার বর্ণনা বর্ণনা পাওয়া যায়। সর্বনিম্ন ২ রাকাত আর সর্বোচ্চ ১২ রাকাত। রাসূলুল্লাহ সাঃ ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়তেন। তাই ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ পড়াই ভালো। তবে রাকাতই পড়তে হবে এমন নয়।
সম্ভব হলে ১২ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতে পারেন। তবে ৮ রাকাত আদায় করা উত্তম। যদি সম্ভব না হয় চার রাকাত আদায় করবেন। যদি তাও সম্ভব না হয় তবে অন্তত ২ রাকাত হলেও তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন।
৩. তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত কি, বাংলায় পড়তে হবে নাকি আরবিতে পড়তে হবে?
তাহাজ্জুদ নামাজের নিয়ত বাংলাতে বললেই হবে বাংলায় নিয়ত হচ্ছে হে আল্লাহ আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাত তাহাজ্জুদ সালাতের নিয়ত করছি। অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে হাত বাঁধবেন।
৪. তাহাজ্জুদ নামাজে কোন সূরা পড়তে হবে?
যে কোনো সূরা দিয়েই এই নামাজ পড়া যায়। এবং তাহাজ্জুদ নামাজ একাই পড়া উত্তম। তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কেরাত নিম্ন স্বরে পড়তে হয়। নবী করীম সাঃ যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
তাই অন্য সব সুন্নত ও নফল নামাজের মতো তাহাজ্জুদ নামাজের সূরা কেরাত নিম্ন স্বরে পড়তে হয়। নবী করীম সাঃ যথাসম্ভব লম্বা কেরাত, লম্বা রুকু ও সেজদা সহকারে একান্ত নিবিষ্ট মনে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করতেন।
তাহাজ্জুদ নামাজে সূরা মুজাম্মিল, সূরা মুদ্দাসসির, সূরা মূলক, সূরা ওয়াকিয়া, সূরা দুখান, সূরা আর রহমান, সূরা ইয়াসিন, সূরা হাশর ও সূরা কাহাফ এবং অন্যান্য সূরা তিলাওয়াত করা অত্যন্ত বরকতময় ও ফলদায়ক। তবে আপনি ছোট সূরাও পড়তে পারেন।
৫. তাহাজ্জুদ নামাজের সঠিক নিয়ম কি?
তাকবীরে তাহরিমা 'আল্লাহু আকবার' বলে নিয়ত বাধা। অতঃপর সানা পড়তে হবে, তারপর সূরা ফাতিহা পড়তে হবে, এর সাথে অন্য যেকোন একটি সূরা মেলানো। অতঃপর অন্যান্য নামাজের ন্যায় রুকু ও সেজদা আদায় করা।
এভাবেই দ্বিতীয় রাকাত আদায় করে তাশাহুদ, দুরুদ ও দোয়া মাছুরা পড়ে সালাম ফিরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করতে হবে।
এভাবে দুই, দুই রাকাত করে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করা উত্তম।
তাহাজ্জুদ নামাজের গুরুত্ব
এ নামাজের গুরুত্ব এজন্যই বেশি যে, প্রতি রাতে মধ্য ভাগে আল্লাহ তা'আলা প্রথম আসমানে নেমে আসেন এবং তিনি বলতে থাকেন কার কি চাওয়ার আছে আমার কাছে চাও আমি তাকে তাই দিব।
তাই তাহাজ্জুদের নফল ইবাদত বিশেষ উদ্দেশ্য বা প্রয়োজন ছাড়া গোপনে পড়াই ভালো। অন্য কারো ঘুমের ব্যাঘাত যেন না হয় এবং অন্যকে দেখানোর মন-মানসিকতা যেন না থাকে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে যথাযথভাবে রাতে শেষ প্রহরে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করার তৌফিক দান করুন আমিন।