সাইয়েদুল ইস্তেগফার ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ

সাইয়েদুল ইস্তেগফার



মহান আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ছাড়া আমাদের আর কোন মুক্তির দ্বিতীয় পথ নেই। আমরা যতই গুনাহগার হইনা কেন তিনি তার চেয়ে কোটি গুণ বেশি ক্ষমাশীল।  


সূরা তোহার ৮২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা করেন "আমি অবশ্যই তার প্রতি ক্ষমাশীল, যে তওবা করে, ঈমান আনে, আমল করে, সৎ কর্ম করে ও সৎ পথে থাকে।


নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নামাজে সালাম ফিরানোর পরে তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ পাঠ করতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন ৭০ বারের বেশি সাইয়েদুল ইস্তেগফার পাঠ করতেন।

 

প্রিয় মুমিন ভাই ও বোনেরা সাইদুল ইস্তেগফার পাঠ করায় ২৯ টি ফজিলত রয়েছে : 


১. অধিক ইস্তেগফারের কারণে প্রচুর বর্ষণ হয়, তাতে খরা ও অনাবৃষ্টি থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। বাগান ও চাষের জমিতে ভালো ফসল হয়। নদী-নালা জীবিত থাকে নদী শুকিয়ে যায় না। সূরা নূর এর ১১ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন আল্লাহ আকাশ থেকে প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন।


২. ইস্তেগফার কারী কে আল্লাহ উত্তম সম্পদ নেক সন্তান ও হালাল জীবিকা দান করে সম্মানিত করেন।


৩. ইস্তেগফার কারিকে আল্লাহ তায়ালা বিপদ থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন। যেকোন বিপদে আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করবে, আল্লাহ তা'আলা তাকে সকল প্রকার সংকট থেকে মুক্ত করবেন।


৪. যাদের সন্তান হয় না, আল্লাহ তাদেরকে নেক সন্তান দান করবেন।

 

৫. আল্লাহ তার ওই বান্দার শক্তি সামর্থ্য ও মর্যাদা বৃদ্ধি করে দিবেন।

  

৬. আল্লাহর আজাব থেকে নিরাপত্তা দান করবেন। সূরা আনফালের ৩৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, তারা ইস্তেগফার করার মত অবস্থায় আল্লাহতালা তাদেরকে শাস্তি দিবেন না।


৭. নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করলে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যাবে। মনে রাখবেন বান্দার তওবার কারণে আল্লাহ আনন্দিত হন।


৮. নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করলে ব্যবসায় বরকত নেমে আসবে এবং অধিক মুনাফা হবে।


৯. অধিক ইস্তেগফার পাঠের ফলে দ্বীন পালন করা সহজ হয়ে যায় এবং কর্মজীবন হয় আনন্দময় ও সুখের।


১০. আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে দূরত্ব গুছে যায়। আল্লাহ তার বান্দার অতি নিকটে চলে আসেন। তখন বান্দার সকল আশা আল্লাহ পূরণ করেন। 


১১. যে নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করবে, মানুষ ও জীনের যাবতীয় ক্ষতি থেকে সে মুক্ত থাকবে।  


১২. ইস্তেগফার পাঠ করলে দ্বীন ও ঈমানের স্বাদ পাওয়া যায়।  


১৩. আল্লাহর ভালোবাসা অর্জিত হয়। 


১৪. বিচক্ষণতা ও আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস বৃদ্ধি পায়। এতে করে আরো বেশি পরহেজগার ও আল্লাহর প্রিয় পাত্র হওয়া যায়।


১৫. জীবনের যাবতীয় দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর হয়। অন্তরে আল্লাহর প্রতি ভরসা দৃঢ় হয় ও জীবন স্বাচ্ছন্দময় হয়। 


১৬. নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করলে বেকারত্ব দূর হয়ে যায়। আল্লাহ রিজিকের ব্যবস্থা করে দেন এবং সচ্ছলতা ফিরিয়ে দেন।


১৭. ফেরেশতারা ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ নিয়ে আসে যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করে।


১৮. হাশরের ময়দানে মানুষ যখন প্রচন্ড গরম ও ঘামের মধ্যে থাকবে তখন ইস্তেগফার কারী ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়া পাবে।


১৯. কিয়ামতের মাঠে যখন মানুষ অস্থির থাকবে তখন ইস্তেগফার কারী ডানপন্থীদের মধ্যে থাকবে।

 

২০. পৃথিবীর সকল মন্দ কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়, নিজেকে হেফাজত করা যায় এবং আল্লাহর ইবাদতের মনোনিবেশ করা সহজ হয়।


২১. আরশ বহনকারী ফেরেস্তাগণ ও তার জন্য দোয়া করেন যেন আল্লাহ তার রহমত ওই ব্যক্তিকে দান করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন।  


২২. গুনাহ মাফ হয়, সূরা নূহ এর ১০ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বর্ণনা করেন "তোমরা তোমাদের রবের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করো" কারণ তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল ও দয়াময়। তিনি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দিবেন।  


২৩. উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, দুঃখ দূর হবে এবং স্বস্তি ও আনন্দ প্রদান করা হবে। সুনানে নাসাই এর ৩৮১৯ নাম্বার হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তাআলা তাকে সকল চিন্তা থেকে মুক্তি দিবেন। সব সংকীর্ণতা থেকে আল্লাহ উদ্ধার করবেন এবং এমন ভাবে তার জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যেটা তার চিন্তার বাইরে।


২৪. আল্লাহ অকল্পনীয় রিজিকের ব্যবস্থা করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন সৎকর্ম ছাড়া কিছুই আয়ু বাড়াতে পারে না, দোয়া ছাড়া কিছুই তাকদীর পরিবর্তন করতে পারে না এবং মানুষ তার পাপ কাজের জন্য তার প্রাপ্ত রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। অতএব রিজিকের বরকতের জন্য পাপ মুক্ত থাকা আবশ্যক। পাপ মুক্ত থাকার অন্যতম উপায় হল ইস্তেগফার পাঠ করা। ইস্তেগফার পাঠের কারণে মহান আল্লাহ তার বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন। ফলে তার রিজিকের অভাব দূর হয়ে যায়। যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তেগফার পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা তার সকল সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।


২৫. আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে মুক্ত থাকা যায়। আল্লাহর প্রতি তার শাস্তির ভয় থাকে।


২৬. নেক কাজ করার প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। কারণ অন্তরে সবসময় আল্লাহর নিকট পবিত্রতা ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নেক কাজ করার জন্য নিজেকে নিয়োজিত রাখতে ভালো লাগে।


২৭. গুনাহের প্রতি ঘৃণা সৃষ্টি হয়। এমন সকল কাজ যাতে আল্লাহ নারাজ হয় এমন কাজে নিজেকে নিয়োজিত করতে অন্তর সমর্থন দেয় না।


২৮. অন্তরের প্রফুল্লতা তৈরি হয় এবং ইবাদতে একাগ্রতা দেখা যায়। ফলে ইবাদতের দিকে বেশি মনোযোগী হওয়া যায়, ইখলাসের সাথে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে ইবাদত করা যায়।


২৯. নিয়মিত ইস্তেগফার পাঠ করলে দুনিয়ায় ও আখিরাতে সফল হওয়া যায়। আল্লাহর সাহায্য ওই ব্যক্তির জন্য অবধারিত হয়ে যায়।