দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া ও আমল



আজ আমরা সেরকম কয়েকটি আমলের কথা বলব, যে আমলগুলো করলে আমাদের দুশ্চিন্তা আল্লাহতালা দূর করবেন এবং বিপদ আপদেও আমাদেরকে মানসিকভাবে প্রশান্ত এবং স্থির রাখবেন


১. জিকরুল্লাহ বা আল্লাহর জিকির:

আল্লাহর জিকির এর চেয়ে কার্যকরী কোন ঔষধ নেই দুশ্চিন্তা দূর করবার জন্যআল্লাহতালা কুরআনে কারীমে বলেছেন, আল্লাহ তাআলার জিকির এর মাধ্যমে মানুষের অন্তর প্রশান্ত হয়ে থাকে। 

অতএব আল্লাহতালা স্মরণ অন্তরে রাখা, মুখে আল্লাহ তায়ালার কথা বলা, একান্তে আল্লাহ তায়ালাকে ডাকা এর মাধ্যমে ডিপ্রেশন দূর করা যায় সবচেয়ে সহজে 

আল্লাহ তায়ালার জিকিরের একটা বিশেষ পদ্ধতি হলো কোরআনে কারীমের তেলাওয়াত করা এবং অর্থ সহ বুঝে পড়া। তাহলে অলৌকিকভাবে আল্লাহতালা আপনার মনের মধ্যে প্রশান্তি সৃষ্টি করে দিবেন



২. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া ও আমল এবং স্পেশাল জিকির দোয়াটি হলো :

"লা ইলাহা ইল্লাল্লা-হুল  আজিমুল হালিম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু রাব্বুল আরশিল আজিম, লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু  রাব্বুস সামা-ওয়া-তি অরাব্বূল আরদ অরাব্বূল আরশিল করীম।"    

এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকৃতি, আল্লাহর মাহাত্য বর্ণনা করার মাধ্যমে আমরা দুশ্চিন্তা এবং পেরেশানির মধ্য থেকে মুক্তি লাভ করতে পারব।  

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই জিকির আল্লাহতালার কাছে তিনি নিবেদন করতেন তার কঠিনতম সময়ে যখন তার সকল সাহায্যের পথ বন্ধ হয়ে যেত



৩. "আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযান ওয়াল আজযি ওয়াল কাসাল ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবুন ওয়া-দলাইদ দাইনি ওয়া গালাবাতির রিজাল।"

 হে আল্লাহ, আমি দুশ্চিন্তা, পেরেশানি, অপারগতা, অলসতা, কৃপণতা, কাপুরুষতা, ঋণের বোঝা এবং মানুষের আধিপত্য থেকে আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি।  



৪. সালাত: এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাহায্য পেতে পারি। সালাত হচ্ছে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের সবচাইতে সহজ মাধ্যম। 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,বান্দা যখন সেজদায় চলে যায় তখন সে আল্লাহর সবচাইতে নিকটতম অবস্থানে চলে যায়। আল্লাহর সবচাইতে কাছাকাছি যেতে পারে। 

এজন্য প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস ছিল  যখনই সমস্যার সম্মুখীন হতেন তখনই তিনি সালাত শুরু করে দিতেন। 

দুশ্চিন্তা ও পেরেশানি থেকে মুক্তির জন্য সালাত অতুলনীয় একটি আমল। তাই আমরা যখনই কোন সমস্যার সম্মুখীন হবো অজু করে দুই রাকাত সালাতে দাঁড়িয়ে যাব। 

দীর্ঘ কেরাতে, দীর্ঘ রুকুতে, দীর্ঘ সিজদাতে ধীরস্থিরতার সাথে সালাত আদায় করে, আল্লাহর কাছে আমরা হাত তুলে দোয়ার মধ্যে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর সাহায্য চাইবো।  

এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অলৌকিকভাবে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দান করে থাকেন। 



৫. ইস্তেগফার পাঠ করানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যাক্তি ইস্তেগফারের আমলকে নিজের জন্য অবধারিত করে নেয়। নিয়মিত ইস্তেগফার করতেই থাকে। আল্লাহ তায়ালা তার জন্য সমস্ত পেরেশানি থেকে মুক্তির পথ বের করে দেন।

এবং কুরআনে কারিমেও বলা আছে, যে মানুষ ইস্তেগফার পাঠরত থাকে আল্লাহ তাকে নিরাপত্তা দেন। 



৬. দুরুদ পাঠ করা: আল্লাহ তাআলার ঘোষণা দিয়েছেন, যে ব্যক্তি দশ বার দুরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তা'আলা সেই ব্যক্তির উপর ১০ বার রহমত নাজিল করবেন। যে কোন বিপদের মুখোমুখি হলে আমাদের উচিত বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা, যাতে আমরা আল্লাহর রহমত পেতে পারি। 

দুরুদ পাঠকারী সম্পর্কে বলা হয় যে, দরুদ পাঠকারী ব্যক্তি তার কোনো চাওয়ার কথা তুলে নাও ধরেন তবুও আল্লাহ তাআলা তার সকল দুশ্চিন্তা, পেরেশানি এই আমলের কারণে দূর করে দেন। 

তাই আমাদের উচিত দৈনিক ১০০ বার দুরুদ পাঠ করা এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর রহমত পাব। 


৭. দান সদাকা: এর মাধ্যমে বিপদ আপদে এবং কঠিন সময় আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে সাহায্য করবেন। 


সর্বশেষ যে কথাটি মনে রাখতে হবে, বিপদ-আপদ  মুসিবত কখনো কখনো আল্লাহতালা দিয়ে থাকেন বান্দার কল্যাণে। যার বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা জান্নাত দিবেন। 

তাই বিপদ আপদ এর সময়ে ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং আল্লাহর সাহায্যের অপেক্ষা করতে হয় এবং সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর প্রতি ভরসা রাখতে হয়।