পরিশুদ্ধ অন্তর পরকালের মুক্তির পূর্বশর্ত। আর অন্তরের পরিশুদ্ধি ঘটে আল্লাহর স্মরণ ও ভালোবাসার মাধ্যমে। আর পাপ কাজ, পাপের সম্পর্ক ও দুনিয়ার মোহ অন্তরকে আল্লাহর থেকে বিমুখ করে। আল্লাহ তা'আলা বলেন, 'যেদিন সম্পদ ও সন্তান কোন উপকারে আসবে না; তবে পরিশুদ্ধ হৃদয় নিয়ে উপস্থিত হবে একমাত্র তাই উপকারে আসবে।
পাপ, পাপাচার, পাপ সম্পর্ক ও পাপ চিন্তা মানুষের হৃদয়কে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এবং তা থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয়। এই ব্লগে আমরা এমন ৪টি পাপের বর্ণনা দিব।
১. অবৈধ প্রেম ও ভালবাসা: অবৈধ প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক মানুষের অন্তরকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিমুখ করে এবং তাকে বহুবিধ পাপের পথে পরিচালিত করে। প্রকৃতপক্ষে মানুষের ভালোবাসা একমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। কুরআনেও আল্লাহ তায়ালা এমনটি বলেছেন যে, মুমিনরা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। (সুরা: বাকারার আয়াত; ১৬৫)
২. দুনিয়া মুখী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব: দুনিয়া-মুখী মানুষের সাথে বন্ধুত্ব মানুষকে পার্থিব জীবনের মোহ ও মায়ায় আচ্ছন্ন করে এবং মৃত্যু পরবর্তী জীবনের কথা ভুলিয়ে দেয়। কুরআনে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, আজ বন্ধুরা পরস্পরের শত্রু, শুধু আল্লাহ ভীরুরা ছাড়া। (সুরা: জুখরুফ,আয়াত: ৬৭)
৩. জাগতিক মোহ: সীমাহীন জাগতিক মোহ মানুষকে আল্লাহ থেকে দূরে ঠেলে দেয়। অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ বিলোপ করে দেয়। মানুষের চিন্তা ও কাজের ভারসাম্য নষ্ট করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দুনিয়ার মোহ সব পাপের মূল। (শুআবুল ঈমান, হাদিস: ১০৫০১)
৪. হারাম উপার্জন : হারাম জীবিকা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর ভয় দূর করে দেয় অন্তরে থেকে আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয় ও কঠোরতা তৈরি করে।
মানুষ যখন চুরি করা, ডাকাতি করা, চাপে ফেলে সম্পদ আদায় করা। এমনকি বৈধ কাজে যখন অপচয় করে, তখন সে সৎ কাজের সাহস হারিয়ে ফেলে। তার উপর শয়তানের প্রভাব বাড়তে থাকে। তার অন্তরের নিয়ন্ত্রণ শয়তানের হাতে চলে যায়। অন্তরে আল্লাহ বিমুখ হওয়ার পরিণতি; যার অন্তরে আল্লাহর স্মরণ ও ভয় নেই সে ভালো কাজে অগ্রসর হতে পারে না, মোনাজাত ও ইবাদতের স্বাদ পায় না; বরং আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে সংকোচ বোধ করে। এছাড়া আল্লাহ বিমুখ অন্তরে কুরআনের সুসংবাদ ও হুঁশিয়ারি পৌঁছে না।
আমরা আরো জানবো, আল্লাহ বিমুখ অন্তর আল্লাহ মুখী করার বিশেষ তিনটি উপায় সম্পর্কে:
১. বেশি বেশি জিকির করা: আল্লাহর জিকির ও স্মরণ মানুষের অন্তরকে আল্লাহ মুখী করে। মহান আল্লাহ বলেন যারা মুমিন তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা প্রশান্ত হয়। নিশ্চয়ই আল্লাহর স্মরণ অন্তর সমূহকে প্রশান্ত করে। (সূরা:রাদ ,আয়াত:২৮)
২. দুঃখী মানুষের পাশে থাকা: অভাবগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ালে, এতিম দুখির মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে অন্তর আল্লাহর মুখী হয়। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 'যদি তুমি তোমার অন্তরকে কোমল করতে চাও, তবে মিসকিনকে খাবার খাওয়াও এবং এতিমের মাথায় হাত বুলিয়ে দাও। (ফাতহিল বারি পৃষ্ঠা-৬২)
৩. কবর জিয়ারত: কবর জিয়ারত,কবর ও কিয়ামত দিবসের আলোচনায় মানুষের অন্তরে আল্লাহ স্মরণ ও ভয় জাগ্রত হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর জিয়ারতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বলেন, তোমরা কবর জিয়ারত করো, কেননা তা তোমাদের পরকালের কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। (ইবনে মাজাহ, হাদীস:১২৮৫)